আমি শুধু আমার সন্তানকে ফিরে পেতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে হাত জোড় করে একটাই অনুরোধ, তিনি যেন আমার মেয়েকে ফিরে পেতে সহায়তা কামনা করেছেন মো. দেলোয়ার হোসেন নামে এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, “মিথ্যা মামলা-হামলায় আমি জর্জরিত। আমি এসবের কোনো বিচার চাই না। আমার কোটি টাকার ব্যবসা নষ্টেরও কোনো বিচারই চাই না, আমি শুধু আমার সন্তানকে ফিরে পেতে চাই।”
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলন কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ আকুতি জানান রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি থানার সোনাপুরের পাইকারি গার্মেন্ট ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “২০১২ সালে মহাখালীর ওয়ারলেস গেটের বাইতুল আমান জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মাওলানা মাঈনুদ্দিনের মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। এক বছর পর আমাদের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। যার নাম সানজিদা আক্তার। বর্তমান বয়স ৮ বছর। বিয়ের প্রায় চার বছর পর ২০১৬ সালে আমি হজে যাই। আমার মেয়ের বয়স তখন তিন বছর। হজে যাওয়ার আগে কেরানীগঞ্জ ইসলাম প্লাজা মার্কেটে ২৮ লাখ টাকা দিয়ে একটি দোকান ক্রয় করি। সেই দোকান বায়না সূত্রে ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়, বাকি টাকা পরিশোধ করার আগে আমার ফ্লাইট হয়ে যায়। ২০ লাখ টাকা আমার এক বন্ধুর কাছে রাখা ছিল। তাই আমার এক বন্ধু ও শ্বশুরকে বলি দুই জনে মিলে দোকান মালিককে টাকাটা দিয়ে দলিল করে নিতে। আমার শ্বশুর আমার বন্ধুর কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে বলে যে আমার কাছে রেখে যাও তোমার কষ্ট করতে হবে না। আমি নিয়ে দিয়ে আসব। সরল মনে আমার বন্ধু টাকাটা রেখে চলে যায়।”
মো. দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, “আমি প্রায় দুই মাস পর হজ থেকে এসে শুনতে পাই আমার দোকান কেনা হয়নি। আমার শ্বশুর টাকা খরচ করে ফেলেছে। আমার টাকা দিয়ে আমাকে না জানিয়ে তার ছোট মেয়ে তামান্নাকে বিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয় নিয়ে আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে জীবনের প্রথম কথা-কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। অনেক তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও টাকা ফেরত না পেয়ে একপর্যায়ে আমি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হই। পরে টাকা দেওয়ার কথা বলে মাওলানা মাঈনুদ্দিন সাহেব তার মেয়েকে বাসায় নিয়ে যান। মেয়েকে বাসায় নেওয়ার পর থেকে তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমি আমার মা, বড় ভাই, ভাবি, ছোট বোন, বোন জামাইসহ বহুবার তাদের বাসায় যাই, যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু তারা ঘরের গেট না খুলে বরং আমার শ্যালক সাব্বির আহমেদসহ কিছু এলাকার উচ্ছৃঙ্খল ছেলেদের দিয়ে আমার মা ভাবিকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। স্থানীয় প্রভাবশালীর মাধ্যমে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বলে, যদি এখানে থাকি তাহলে পুলিশের মাধ্যমে থানায় নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দেবে। আমরা ভয় পেয়ে তখন নিজ বাড়িতে চলে যাই। তার এক সপ্তাহ পরে আমার স্ত্রী ডিভোর্সের চিঠি পাঠায়।”
মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য তারা চাপ দিতে থাকেন বলে অভিযোগ করে দেলোয়ার হোসেন বলেন, “একপর্যায়ে উভয়পক্ষের আইনজীবী পরিকল্পিতভাবে মীমাংসা করার কথা বলে আমাকে মামলাগুলো তুলে নিতে বলে। আমি সরল মনে তাদের কথা বিশ্বাস করে মামলা তুলে নিই। কিন্তু তারা কোনো মীমাংসায় না এসে বরং আমার নামে একের পর এক মিথ্যা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট ছয়টি মামলা করে। স্ত্রী চলে যাওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমার একমাত্র মেয়ে সানজিদা আক্তারের সঙ্গে একটিবারও আমাকে কোনো যোগাযোগ করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমি আমার মেয়ে সানজিদা আক্তারকে দেখতে এবং সমস্যা নিরসনের জন্য বিভিন্ন মহলে আবেদন করতে থাকি। কিন্তু আমার মেয়ের মুখটি একটিবারও দেখার জন্য কেউ কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। আমি মেয়েকে দেখার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছি। কী করব বুঝতে পারছি না। আমার কলিজার সঙ্গে আমার পাঁচ বছর কোনো কথা বলা ও দেখা করার সুযোগ হয়নি এবং আমি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আমার মেয়ের জন্য কাপড়-চোপড়, বই-খাতা, কলম ইত্যাদি পাঠাই, সেগুলো রিসিভ না করে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। তারা কী ভেবে, কেন এমন করছে জানি না। আমার মেয়ে আদৌ কি বেঁচে আছে? নাকি মেরে ফেলেছে তাও বুঝতে পারছি না।”
এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, “আমি এসবের কোনো বিচারও চাই না। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হাত জোড় করে আমার সন্তানকে ভিক্ষা চাই। আমি এক অসহায় বাবা। তিনি যেন আমাকে ন্যায়বিচার পেতে এবং আমার মেয়েকে ফিরে পেতে সহায়তা করেন।”
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মাঈনুদ্দিনের মুঠোফোনে কল করা হলে একজন নারী কলটি রিসিভ করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন ও বনানী থানায় যোগাযোগ করতে বলেন।